^^স্বাগতনামা^^

▒████████▒ ▒▒▒▒▒ >শুস্বাগতম< ▒▒▒▒▒ ▒████████▒

আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য অভিনন্দন আপনাকে.....


“বড় বেশি বিষণ্নতায় ছেঁয়ে যাওয়া দিনগুলো আমার ভালো লাগে না
ভালো লাগে না একাকী নিজের সঙ্গে আঁলাপন...

জীবনের এমন নৈঃশব্দ্যে আমি হারাতে চাই না আমাকে.....
তাইতো জীবনকে একটু গতিময় করতেই আমার এই আয়োজন।”

...................................................................................................................................................................................... . . . . . .

রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

আমরাও কাজী নজরুল ইসলাম হতে চাই, কিন্তু দুখু মিয়ার মত কষ্ট পেতে চাই না


"একটা ডানাভাঙ্গা পাখি....
যার সামনে সবুজ মাঠ থাকে, ভোরের নীলাকাশ থাকে। কিন্তু সে ছটফট করে। উড়তে পারে না। কেন জানেন?
তার পাখাটা বাঁধা থাকে। প্রচন্ড মনোবল থাকা সত্ত্বেও সে পাখা মেলে উড়তে পারে না। সে স্থবির হয়ে পড়ে।

পাখিটার একটু সাহায্যের প্রয়োজন! পাখিটার একটু সহানুভূতির প্রয়োজন!

আজকে এখানে অনেক ডানাকাটা পাখি রয়েছি। আমাদের মনোবল দরকার, আমাদের পাশে কারো দাঁড়ানোর প্রয়োজন।
আমি আজকে অনেক আবেগাপ্লুত। জীবনে এই প্রথম মেধার মূল্যায়ণ পাচ্ছি....

আমি যে ঘরে জন্মেছি সে ঘরে কেরোসিন তেল ছিলো না। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে আমার দাদা কেরোসিন তেল এনে দেন নি। আমার আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছিলেন, অনেক কান্না করেছিলেন। তখন আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিলেন যে আমাকে মানুষ করবেন। আমার এত দূর আসার পেছনে আমার মায়ের আর বাবার অবদান অনেক বেশি।
আমাদের কিছুই ছিলো না, কোন জমিজমা ছিলো না। শুধু তাঁদের মনোবলের উপর ভিত্তি করে এতদূর আসতে পেরেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও আমাকে চিন্তা করতে হয়েছে আমি ওখানে পড়তে পারবো কিনা, আম্মুকে বার বার বলেছি,"আম্মু আমি ওখানে পড়তে পারবো তো?"....

আমার অনেক স্বপ্ন ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হবো।
আমি যে এখানে পড়তে আসবো.... ভাড়াটা পর্যন্ত যোগাড় করা অসম্ভব ছিলো।

রাত্রে চিন্তা করতাম," আমি ভাইভা দিতে যেতে পারবো তো?"....
একটা বিষয় আপনারা চিন্তা করতে পারেন স্যার, দুজন স্টুডেন্ট গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। একজনের টেবিলের পাশে তার মা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আরেকজনকে টেবিলে বসে চিন্তা করতে হয় সে পরদিন সকালে কী খাবে? কী খেয়ে সে কলেজে যাবে?

আমি ঢাকায় এসে দেখেছি আমার এক আত্মীয়ের বাসায়। তার মা তার পেছনে সারাদিন খাবারের বাটি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে....

আমি লালমনিরহাট জেলা থেকে এসেছি। যেখানে (শীতকালে) পাঁচ ডিগ্রি ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। আপনারা যদি কখনো শীতের দিন সেখানে যান দেখতে পাবেন কী প্রচন্ড শীত! আমি দেখেছি, এই শীতের দিন একটা দেড় বছর বয়েসী বাচ্চাকে তার মা আগের দিনের ঠান্ডা ভাত মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খাওয়াচ্ছে।
চিন্তা করুন স্যার,আরেকটা বাচ্চা যে খাবে না কিন্তু হরলিক্স, নুড্যুলস, মিষ্টি... তার পিছনে পিছনে নিয়ে ঘোরা হচ্ছে। সে খাবে না কিন্তু তাকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে....
(বক্তব্যের এ পর্যায়ে বক্তা অশ্রু রোধ করে রাখতে পারেন নি,তারপর কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন)

এই যে বৈষম্য! এই গোল্ডেন এ প্লাস! কীভাবে মূল্যায়ণ করবেন আপনারা?
একজন খাবার পাচ্ছে না,আরেকজনের পেছনে খাবার নিয়ে ছুটাছুটি করা হচ্ছে।কীভাবে মূল্যায়ন করবেন স্যার? এই যে আমরা এতদূর এসেছি? কারা আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে?মাথায় হাত বুলানোর মত কেউ নেই।....

দুখু মিয়া নজরুল হয়েছিলেন সত্যই... রফিজউদদীন দারোগার হাত ধরে...
কিন্তু দুখু মিয়া কখন পুস্পমাল্য পেয়েছিলেন স্যার? যখন সে নির্বাক হয়ে গেছে। বলুন, আমরা তাকে কখন পুস্পমাল্য দিয়েছি?কি পেয়েছেন তিনি?...
যখন মূল্যায়ণ পেলে তাঁর ভালো লাগতো,তাঁর অনুভূতি তিনি জানাতে পারতেন তখন আমরা তাঁকে কারাগারে রেখেছি ।
আর আমরা যখন তাঁকে পুস্পমাল্য দিয়েছি তখন তিনি নির্বাক হয়ে গেছেন!....

আমরাও নজরুল হতে চাই স্যার। কিন্তু পুস্পমাল্যটা নির্বাক হওয়ার পর পেতে চাই না...

দিনের পর দিন যখন আমরা খাবারের চিন্তায় ঠিকমত পড়াশুনাও করতে পারি না....
কিন্তু তখন ,আমারি সহপাঠীকে দেখেছি আমি কোটিপতির মেয়ে সে, ভাবতো কোনরকম একটা রেজাল্ট করে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাবে...
তখন আমি চিন্তা করতাম কীভাবে ভালো রেজাল্ট করবো..
কিন্তু আদৌ আমি ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারবো কি না?...
কী পাবো আমরা? আমাদেরকে কে স্বপ্ন দেখাবে?

আমি আপনাদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পেশ করছি, আপনারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ডানাকাটা পাখিকে আকাশ উড়বার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আপনারা আমাদের স্বপ্নের সাথী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আজকের এই অনুষ্ঠানটি যদি কোন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়...
আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলতে চাইবো, " সমাজের বিত্তশালী মানুষ! আপনারা এগিয়ে আসুন! আপনাদের সন্তানদের বহুমূল্য খেলনা কিনে না দিয়ে কীভাবে আরেকটা বাচ্চার একবেলা অন্নসংস্থান হতে পারে-- এটা একটু চিন্তা করবেন।"

আমি অনেক দুঃখিত আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি বলে। আসসালামু আলাইকুম।"

                                                                                             ---তাসলীমা আফরোজা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ(IBBL) আয়োজিত এক বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোন আফরোজার এই অশ্রুভেজা বক্তব্য শত মানুষকে কাঁদিয়েছিলো। আপনারা অনেকেই হয়তো দেখেছেন বক্তব্যটি। না দেখলে দেখে নেবেন। নিচে ইউটিউব এর লিঙ্ক দেয়া হয়েছে।

আফরোজা হলো বাংলাদেশের সেই মেধাবীমুখগুলোর প্রতিনিধি যারা নিষ্ঠুর দারিদ্রের আঘাতেও হাল না ছেড়ে যাত্রা শুরু করেছিলো স্বপ্নের পথ ধরে....
আমি জানি না বোন আফরোজা এখন কী অবস্থায় আছেন। শুধু তাঁর জন্য দুয়া করি তিনি যেন তাঁর স্বপ্নের সৌধ চূড়াটি স্পর্শ করতে পারেন। তাঁর ঝরে পড়া অশ্রুর বিন্দুগুলো যেন পুস্প হয়েই ফোটে...
কী বৈষম্য এটুকু একটা দেশে! এক ঘরে ক্ষুধা আছে কিন্তু কোন খাবার নাই...
অথচ আরেক ঘরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হচ্ছে! চরম হেলায়! এক মা সন্তানের পেছনে ছোটাছুটি করছেন খাবারের পেয়ালা নিয়ে, আরেক মা রাত্রে বেলা নির্ঘুম কাটান..
তাঁর সন্তানটি আগামীকাল সকালে কী খেয়ে যাবে স্কুলে?



আমাদের বিত্তবানরা কি পারেন না তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে? খুব ত্যাগ করা লাগে কি?
কে এফ সি তে আপনার একবেলার বিল আসবে দুহাজার টাকা (কমপক্ষে) অথচ মাত্র দুহাজার টাকাতেই একজন আফরোজার এক মাসের পড়াশুনার খরচ মিটে যাবে। এমন আফরোজা আছে হাজার হাজার। এমন মেধাবী ফুলগুলো! শুধু সামান্য একটু সহায়তার হাত বাড়ানোর অপেক্ষায়..
ভালোবাসামাখা একটি হাসির অপেক্ষায়..

এদেরও যে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে, এদের মাঝেও যে নজরুল, ফররুখ আর বেগম রোকেয়ারা বসবাস করে...
এদের মাঝেও যে রেহমান সোবহান আছে.. কামাল হোসাইন আছেন।এদের মাঝেও একজন এফ রহমান খান আছেন।
আমাদের অবহেলায় ফুলগুলো শুকিয়ে গেলে কী জবাব দেব আমরা পালনকর্তার কাছে?

আমি জানি না ক্ষুধার কষ্ট কাকে বলে (আল্লাহর অশেষ করুনায়)। তাই তাদের কষ্টটা অনুভব করেছি একথা বলার সাহস করি না।
কেবল দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় যখন শুনি আমারই এক ক্লাসমেট বলে," তুমি কি জানো? অ্যাডমিশন কোচিং করার জন্য ঢাকায় এসেছি... থাকতে হয়েছে কয়েকমাস... এমনও দিন গিয়েছে হাতে ছিলো মাত্র এক টাকা। হোস্টেলের খাবার টাকা দিয়েছি ধার করে। বাবা সময়মত টাকা পাঠাতে পারতেন না। রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ঠিকমত পড়তে পারতাম না। মনে হত কাল সকালে টাকা ঠিকঠাক আসবে তো?"
কেবলই ভাবি তখন, আর আমি? যখন যা চেয়েছি অন্যায্য না হলে বাবা মা সব আবদারই পূরণ করেছেন। রাত একটা বাজে এসে মা লাইট নিভিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেছেন,"থাক মামণি! এখন ঘুমা!" আর আমারি মত আরেকজনের তখন নির্ঘুম রাত কাটতো। কিন্তু আজ সেও যেখানে আমিও সেখানে।
কীভাবে মূল্যায়ণ করা উচিত আমাদের? মানদন্ড কী হবে?

আসুন আমরা এই ডানাভাঙ্গা পাখিদের ওড়ার স্বপ্ন দেখাই,ওদের ডানাগুলোর যত্ন নেই...
উদার আকাশে.. আমাদের সাথে...


সংগৃহীত: প্রিয় এস.বি ব্লগার “বইয়ের পাতায় রোদের আলো” থেকে...
ভিডিও লিংক: http://www.youtube.com/watch?v=gT2vIxAQBiI

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন